মন্দায় যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাজ্য সরকার




২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং
sbit

২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার ধাক্কা সামলানোর আগেই মহামারি করোনার থাবা শুরু হয়। করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুক্তরাজ্যের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে উল্লিখিত তিনটি কারণ অন্যতম।

টানা তিন বছর অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়ে যুক্তরাজ্যের মানুষের অবস্থা সঙিন। আয়ের তুলনায় মানুষের ব্যয় বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাড়িভাড়া, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন দেশটির সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

করোনার সময় যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের ‘ইউনিভার্সেল ক্রেডিট’ শীর্ষক সামাজিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ইউনিভার্সেল ক্রেডিট হচ্ছে এ রকম: কারও চাকরি না থাকলে পরবর্তী চাকরি পাওয়ার আগপর্যন্ত বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে খাবারসহ যাবতীয় খরচের জন্য সরকার অর্থ দেবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) থাকা অবস্থায় বেশি মানুষকে যেন চাকরি হারাতে না হয়, সে জন্য ২০২০-২১ সালে ‘ফার্লো স্কিম’ নামের বিশেষ সুবিধায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের বেতনের ৮০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।

ব্রিটিশ নাগরিক ইভা ট্রেটেনারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমার চাকরি চলে যাওয়ায় খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু তখনই সরকার ফার্লো স্কিম ঘোষণা করে। এ সুবিধার আওতায় পরবর্তী চাকরি পাওয়ার আগপর্যন্ত আমি প্রতি মাসে আমার বেতনের ৮০ ভাগ সরকার থেকে পেয়েছি।’

ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে ‘বাউন্স ব্যাক’ ঋণ ঘোষণা করেন ঋষি সুনাক। এ ঋণ পেতে ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জামানত ছাড়া ২ শতাংশ সুদে ৫ থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। জামানত দিয়েছে সরকার স্বয়ং। ১৫ লাখ ছোট ব্যবসায়ী ৪৭ বিলিয়ন পাউন্ডের ‘বাউন্স ব্যাক’ ঋণের উপকারভোগী।

বাউন্স ব্যাক ঋণের উপকারভোগী ইস্ট লন্ডনের ব্যবসায়ী সেফুল আহমদ বলেন, ‘হঠাৎ করোনা মহামারি আসায় ব্যবসায় ধস নামে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করব। তখন সরকার–ঘোষিত বাউন্স ব্যাক ঋণের আওতায় খুব সহজে স্বল্প সুদে ৫০ হাজার পাউন্ড ঋণ নিয়ে ব্যবসা ধরে রাখি। প্রথম এক বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি। পরবর্তী বছর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে মাত্র ২ শতাংশ সুদে কিস্তি পরিশোধ করছি। এখন ব্যবসা ভালোই চলছে।’

করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ হলে সাধারণ মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরেক দফা অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে যুক্তরাজ্য। বিশেষ করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। সরকার তখন জনগণের ব্যয় সমন্বয় করতে সামাজিক সুবিধার আওতায় থাকা সব পরিবারকে দুই কিস্তিতে ৬৫০ পাউন্ড করে ও প্রতিবন্ধীদের ৭৫০ পাউন্ড সহায়তা দেয়। একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিলের জন্য প্রতি মাসে ৬৭ পাউন্ডের বিশেষ সুবিধা এখনো চলমান।

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। তারা ধনী দেশ হলেও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। অনেক মানুষ পাতের খাবার কমিয়ে দেয়। এ পরিস্থিতিতে সেখানে জায়গায় জায়গায় বিনা মূল্যে ‘ফুড ব্যাংক’ খোলা হয়। কারও জরুরি অর্থের প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখানে সব ধরনের সহায়তার পাশাপাশি স্বল্প সুদে ও সহজ উপায়ে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা আছে, সরকারই সে ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় সরকারের কাউন্সিলগুলো সংকটকালীন বিশেষ বিশেষ সুবিধা নিতে সরকারি ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যানার লাগিয়ে প্রচারণা চালায়।

লন্ডনে কর্মরত বাংলা গণমাধ্যমের সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এ দেশের সব কর্মকাণ্ডের মূলে হচ্ছে জনগণকে ভালো রাখা। জনগণের যাতে কষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ দেশের সব নীতি প্রণীত হয়। সে জন্য যুক্তরাজ্য সরকার অর্থনৈতিক সংকটে থাকলেও সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে।